একটি রাজনৈতিক দলের আত্মহত্যা প্রচেষ্টা ও গণতন্ত্রের সংকট   Leave a comment

(এ লেখাটি গত ৮ জুন বনিকবার্তা’য় ছাপা হয়েছে; সেখান থেকে তুলে দিলাম)

গত ২৮ মে ত্রিশাল থেকে যখন ‘অটো’তে করে গফরগাঁওয়ের আত্মীয় বাড়ি যাচ্ছিলাম, তখন সহযাত্রীদের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথা উঠল; তারা গফরগাঁওয়ের রসুলপুর ইউনিয়নের ভোটার; তাদের নির্বাচন নিয়ে বেশি উত্সাহী মনে হলো না। কারণ হিসেবে তারা জানাল এবারে নির্বাচন হচ্ছে মূলত কাউন্সিলর পদে, চেয়ারম্যান হবে স্থানীয় এমপি যাকে মনোনয়ন দিয়েছে সে। জোর গুজব চেয়ারম্যান পদে ভোট দিতে হবে সবার সামনে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে অথবা ফলাফল বদলে দেয়া হবে উপজেলা সদরে। তাদের মতে, আগের চেয়ারম্যান মইন সরকার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও বিদ্রোহী প্রার্থী, তাকে সমর্থন করে ৯০ শতাংশ মানুষ। কিন্তু সে কোনো প্রচারণা চালাতে পারছেন না, তার সমর্থকদের আওয়ামী লীগ তথা এমপি মনোনীত প্রার্থীর কর্মীরা মারধর করছে; সংঘর্ষ হচ্ছে দুপক্ষের মধ্যে, যা তাদের এলাকায় আগে দেখা যায়নি। ‘এমপি মনোনীত আওয়ামী লীগারদের’ হামলা-নির্যাতনে বাইরে বের হতে পারছে না বাকি আওয়ামী লীগাররা। আরেকটু এগোতেই পড়ল বারবারিয়া ইউনিয়ন, সেখানকার আগের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন তিন-তিনবার নির্বাচিত, ছাত্রলীগের রাজনীতি করে উঠে আসা, তুমুল জনপ্রিয়, কিন্তু তিনিও এমপির মনোনয়ন পাননি, তাই দলের প্রার্থী হতে পারেননি। সহযাত্রীদের মতে, মানুষ যদি কোনোমতে তাদের ভোট দিতে পারে তবে সে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে আর এমপি মনোনীত আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার শঙ্কা বেশি। এমপি মনোনীত প্রার্থী উপজেলায় ‘খাইয়ালা কাশেম’ নামে পরিচিত তার সর্বভুক অর্থলিপ্সার জন্য। কিন্তু এত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও পুরনো পরীক্ষিত নেতারা কেন দলের মনোনয়ন পেল না— জানতে চাইলে তারা জানাল, উপজেলার কোনো পুরনো জনপ্রিয় নেতাই এবার মনোনয়ন পাননি; পেয়েছে ভুইফোঁড় আর কুখ্যাত সব ব্যক্তি। স্থানীয় এমপি মনোনয়ন দিয়েছে টাকার বিনিময়ে, মোটা অঙ্কের টাকা। আর এসব অর্বাচীন প্রার্থীদের নির্বাচনে পাশ করাতে সে ও তার চেলারা কায়েম করেছে ত্রাসের রাজত্ব। কর্মীরা ভোট চাইতে পারছেন না, মাইকে প্রচারণা চালাতে পারছেন না, সে নিজেও গণসংযোগ করতে পারছেন না। আমি নিজ চোখেই দেখলাম যাত্রাপথে কোথাও কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর পোস্টার চোখে পড়ল না, যেখানে নৌকার পোস্টারে পুরো এলাকা সয়লাব।

যাহোক, আত্মীয় বাড়ি গিয়ে পৌঁছলাম, সেখানেও এল নির্বাচন প্রসঙ্গ, তারা আজীবনের একনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ সমর্থক, কিন্তু এবার কোনো মতেই ‘আওয়ামী লীগ মনোনীত’ প্রার্থীকে ভোট দেবে না। তারা অত্যন্ত বিরক্ত যে, সারা উপজেলায় সব ‘গুণ্ডা-বদমাস’দের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ঘুষ নিয়ে। আর তারা ক্ষমতার দম্ভে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে, মানুষকে নির্যাতন করছে। প্রশাসন হয় নীরব দর্শক, না হয় এসবে সক্রিয় সহযোগী। বাড়ির শিশুরাও, যারা আগে বড়দের দেখাদেখি আওয়ামী লীগের গুণগানে মুখর থাকত, তারাও ‘মনোনীত আওয়ামী লীগারদের’ বুঝাতে এমনভাবে ‘আওয়ামী লীগ’, ‘আওয়ামী লীগ’ করছিল যে, আমি বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম এটা কি ‘জাত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের’ বাড়ি না অন্য কারো।

আওয়ামী লীগ যখন দলীয় মনোনয়নে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দিল, তখনই আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে, এতে স্থানীয় নেতারা তাদের পছন্দের লোকদের মনোনয়ন দেবে দলে তাদের অবদান আর জনপ্রিয়তার তোয়াক্কা না করেই; হবে মনোনয়ন বাণিজ্য; তাতে দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী বঞ্চিত হবে, অসন্তুষ্ট হবে আর দল হবে দুর্বল। কিন্তু আমি বিস্ময়ের সঙ্গেই লক্ষ করলাম আমার আশঙ্কার চেয়েও পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ- এ মনোনয়ন পদ্ধতি আসলে দলের স্থানীয় পর্যায়ে এক ধরনের জায়গিরদারি প্রথা চালু করেছে মূলত এমপিকে কেন্দ্র করে, যেখানে তাকে নজরানা না দিয়ে, তার ধামাধরা না হয়ে দলে টিকে থাকা অসম্ভব। এমনকি ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও। আর প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিরোধিতার তো প্রশ্নই ওঠে না। বর্তমান অবস্থায় দলের বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থক শুধু অসন্তুষ্টই নন বরং ‘এমপি মনোনীত আওয়ামী লীগার’ দ্বারা নির্যাতিত। ফলে তারা ক্রমে নিজ দলের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এমপি-মন্ত্রীদের পোষা কিছু গুণ্ডা ছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মী খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। শুধু তাই নয়, এটা তাদের সমর্থকদেরও দলের প্রতি বিরূপ করে তুলছে। আওয়ামী লীগের প্রথাগত বংশানুক্রমিক সমর্থক গোষ্ঠী দ্রুত ক্ষয়ে যাওয়ার হুমকির সম্মুখীন। গ্রামের মানুষের কাছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন একটি বড় উত্সব, যা থেকে আওয়ামী লীগ তাদের বঞ্চিত করছে; এটা তারা ভালোভাবে নিচ্ছে না, যেমন নিচ্ছে না তাদের ভোটের অধিকার খর্ব করাকে। আর এটা এমন একসময়ে ঘটছে, যখন ধানের অতি কম দামের জন্য কৃষকরা এরই মধ্যে নাখোশ। এটি যেন আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত আত্মহত্যা প্রচেষ্টা।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার ভয় পাওয়ার পরিসর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যতের চেয়েও অনেক ব্যাপক। বিএনপি তার দুই রাজনৈতিক ভুল- অতি জামাতপ্রিয়তা বা নির্ভরতা ও অতিদ্রুত নির্বাচনের বিকল্প পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টায় এবং সরকারি দলের দমন কৌশলের কারণে জীর্ণ, দিশেহারা; তাদের গুছিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। আর এখন আওয়ামী লীগের গণভিত্তি, স্থানীয় সাংগঠনিক কাঠামো ও জনসমর্থন হুমকির মুখে; তারা প্রথাগতভাবে যে সমর্থকগোষ্ঠীর একচ্ছত্র সমর্থন পেয়ে আসছিল, তা ক্ষয়িষ্ণু। গত দুদশকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছিল, তা মাত্র দুবছরে তারা প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। নির্বাচনে সহিংসতা, সন্ত্রাস ফিরে এসেছে আগের চেয়েও ভয়াবহ রূপে; যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতিরও লক্ষণ। এাট নিশ্চিতভাবেই সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহিংসতা উসকে দেবে আর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আইনের শাসনের অবস্থা আরো খারাপ হবে। দেশে ক্রমবর্ধমান মৌলবাদের (পড়ুন আমূলবাদের/ radicalization) বিস্তার আর জঙ্গি তত্পরতার প্রেক্ষাপটে জনগণ যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আস্থা হারায় (বর্তমান পরিস্থিতিতে যা অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে হচ্ছে, কারণ দলগুলোর ওপর আস্থার জায়গা আর খুব একটা বাকি নেই) তবে তা যে ওই দলগুলোর ধ্বংসই ডেকে আনবে, তা নয় বরং দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে, মৌলবাদী, অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে বলবান হওয়ার, প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দেবে, যা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। আর তা যদি ঘটে তবে এর জন্য দায়ী হবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, তাদের অপরিণামদর্শী কার্যকলাপ, ক্ষমতার লোভ ও দম্ভ।

সূত্রঃ

http://bonikbarta.com/news/2016-06-08/76850/%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%A6%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%9F/

Posted June 18, 2016 by Abu Ala in Uncategorized

Research Report Published   Leave a comment

My co-authored research report “Uncounted Works Of Indigenous Women At Chittagong Hill Tracks” has been published.

Here is the link of the electronic version-

 

 

গ্রামের জঙ্গলের বন্যপ্রাণী সমাচার   Leave a comment

ছোটবেলায় যখন গ্রামে যেতাম শেয়াল, খেক-শেয়ালের ডাক খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল। বনবিড়াল ও ছিল। মাঝে মাঝে লোকজন মিলে তাদের মারতেও বের হতো যখন হাঁসমুরগির উপর তাদের হানা বেড়ে যেতো। মাঝে অনেক বছর এদের তেমন কোন সাড়াশব্দ পেতামনা; ভেবেছিলাম এরা বোধহয় হারিয়েই গেছে। গত কয়েক বছর ধরে শেয়ালের উৎপাতের কথা শুনে আসছি; বিশেষ করে পাগলা শেয়ালের মানুষ কামড়ানোর কথা। তারপর নিজেও দিনেদুপুরে রাস্তাঘাটে দেখলাম; আর রাতে তো সারা গ্রাম তাদেরই দখলে থাকে। কুকুরগুলো নাকি তাদের ভয়ে লুকিয়ে থাকে। গত ধানের মৌসুমে ধানক্ষেতের ফাঁকে একটি বনবিড়ালও দেখলাম বহুবছর বাদে। মনটা বেশ খুশী হয়ে গিয়েছিল যে এসব বন্যপ্রাণীরা এখনো টিকে আছে; তাদের সংখ্যা বাড়ছে তাই দেখা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় আমার ক্ষণস্থায়ী আনন্দ আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে- প্রথমতঃ লোকজন শেয়ালের উৎপাতে খুব বিরক্ত, হাঁস-মুরগী, ছাগল নিয়ে যাচ্ছে; দ্বিতীয়তঃ মানুষকে কামড়াচ্ছে, দুদিনে বেশ কয়েকজন মানুষকে কামড়েছে বলে শোনা গেছে। তৃতীয়তঃ এবার “ওয়াপ” (বনবিড়াল) ও মানুষকে কামড়েছে বলে শুনলাম; যার ফলে একটি বনবিড়ালকে মেরেও ফেলা হয়েছে। গিয়ে দেখি একটা ছোট বনবিড়ালকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ’টি নাকি ঘরে ঢুকে একটি বাচ্চাকে কামড়েছে। আমার মনে হল বিড়ালটি আত্মরক্ষার জন্য এ কাজ করেছে। পাগলা বেড়ালে কামড়ানোর কথা তো আগে শুনিনি; তা ছাড়া বনবিড়াল লাজুক, গোপনীয়তা প্রিয় প্রাণী, মানুষের সামনে তো সহজে পড়তে চায়না।

এ ঘটনা আমার মনে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিল, যা আশঙ্কার- এক, আমি যে ভেবেছিলাম এসব বন্য প্রাণীগুলো টিকে আছে তা কি সঠিক? নাকি অবশিষ্ট যে কয়টা আছে সেগুলোও এখন লুকিয়ে থাকার জায়গা পাচ্ছেনা, পাচ্ছেনা খাবার আর তাই ঝুঁকি নিয়ে মানুষের কাছাকাছি, তাদের সামনে আসতে হচ্ছে। গ্রামে যে হারে জঙ্গল আর গাছ-পালা কমছে তাতে সেটা হবার সম্ভাবনাই বেশী। অন্যদিকে মানুষের উপর তাদের আক্রমণ যে কারণেই হোক তা যে তাদের উপর প্রতিশোধমূলক হামলা আরও বাড়িয়ে দিবে তা বলাই বাহুল্য। মোদ্দাকথা সাম্প্রতিককালে কেন এসব প্রাণীর মানুষের ওপর আক্রমণ ও তাদের প্রকাশ্যে দেখা যাওয়া বেড়ে গেছে তা বৈজ্ঞানিকভাবে অনুসন্ধান করে সংরক্ষন ব্যবস্থা না নিলে এরা যে দ্রুতই হারিয়ে যাবে তা নিশ্চিত। সম্ভবত এটাই আমাদের শেষ সুযোগ এদের টিকিয়ে রাখার।

Experience of “Waje Mahfil” (Islamic Seminar/speech)   Leave a comment

Posts From facebook

February 3 at 10:59pm

I have been compelled to listen high volume “Waje” (Islamic speeches by clerics) in my village. Though there are some good advice in the speech that I liked. It is going on without any concern about the sound safety/pollution and the studies of the students who are appearing SSC exams. But I am more bothered by the reference of the other religions to establish supremacy of Muslims and the offensive tone by a speaker to them and to the cultural practices such as listing music.
I think it is completely unnecessary to refer to others for proving ones superiority if they are really superior. Islam and Muslims have a lot of things to be proud of and they have the same chance to do good things to be more proud like anyone else in the world; so when these mean-minded clerics would realize the importance of respecting others and good deeds to make oneself proud than offending others? And would be responsible to other people —

 

February 4 at 10:53pm

After the speeches prolonged beyond the midnight, one of the hot topics today was a comment by a cleric: A Muslim man should not apply razor to his beard, means one should not trim his beards; some people were asking if it is seriously meant; then some other replied- they should have asked that to that speaker, if he had ever trimmed his beards, which is most likely. Besides that my observation is the younger speakers delivered the most important advice in their speech but the crowd favourite were those older ones who could sensationalize the speech, added some spicy statements and could prove that ‘Muslims’ are superior to ‘others’ regardless their practices and qualities (well there is still space for debate on what they meant as ‘Muslims’). So, my observation is that the quality of speakers and audiences reproduces each other and limits hope for people like me that the society would be benefited from it.

 

February 4 at 11:15pm

In the evening I came across a group of my relatives and fellow villagers who were devising publicity strategy for another such “Islamic Waje Mahfil” in two weeks time at arms length form the place of the last nights one, beside another mosque (there are two mosques in the community within the distanse of few hundred meters resulting from factional rivalry) and my impression was that this “Waje Mahfil” was not also a separate incident. From last night’s experience I requested the coordinating person of this event, a senior cousin of mine, to consider two things: the SSC exam of the students and the issue of sound level; he replied that the high volume religious speech is not a problem, as it is virtuous, no one should complain about it. Though one or two in the gathering nodded in support, my request was returned from deaf ears. As I am writing, loudspeaker sound of another such event from few kilometers apart is pouring in to my ears; and reminding me that at my childhood and youth such events were rare and within last decade or even less than that it is becoming more frequent along with sending the children in the religious schools.

(after the above post some of my friends expressed concerns over my safety due to recent extremism on religious issues and I had to write the following reply–)

February 6 at 11:42am

Thanks everyone for your concerns! I partially agree with you; except the risk factor, which was minimal as that was my village and I and my family have a reputation there; however, few valuable things I have learned there- the sound and exam time issues are probably due to ignorance and unawareness- when I raised it, immediately some people agreed with it but unfortunately not all; later some of the organizers told me that they will try to keep sound low. And I am sure if they could thought about it consciously, they would have considered about exam too; they already printed the posters, made some preparation and invested some money, so it was not easy for them to change the date. I hope next time they will consider those. And it is our duty to share knowledge and awareness with our community —-

 

Posted February 6, 2016 by Abu Ala in Governance, Religion & faith, Society

সন্ত্রাসী আন্দোলন ও আমরা   Leave a comment

কাল সন্ধ্যায় একটি পরিবেশবাদী সংগঠনে সভা শেষে ফিরছিলাম – একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকনেতা আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দেবেন বলে তাদের গাড়িতে উঠালেন, সোবহানবাগ মসজিদের কাছে পৌছলে রাস্তায় গাড়ির ভিড় প্রায় থেমে ছিল, এমন সময় শব্দ হলো তাকিয়ে দেখলাম সামনের গাড়িতে ধোয়া, একজন হেলমেট পরা লোক সরে যাবার চেষ্টা করছে – মনে হলো পুলিশ বা বিজিবি সদস্য; সাথে সাথে আরেকটি শব্দ মনে হলো এবার আমাদের গাড়িতেই – সৌভাগ্যবশতঃ তা হয়নি, তবে সামনের গাড়িতে আগুন ধরে গেল; আমরা সবাই অত্যন্ত আতঙ্কিত ছিলাম; চালক দ্রুত সেখান থেকে সরে যেতে পারল; আমরা কিছুটা স্বস্তি পেলাম যদিও পুরো আশ্বস্ত নয় যে নিরাপদ হতে পেরেছি। আমার বিএনপিপন্থী সহযাত্রীরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন, এমনও বলছিলেন যে যদি আমরা আহত হতাম তাহলে কি হতো ? – পত্রিকায় সংবাদ হতো নিশ্চিত; দল থেকে সরকারকে দোষ দেয়া হতো, সরকারী দল দোষ দিত বিরোধী দলকে; কেউ বলতো উচি‌ত শিক্ষা হয়েছে বিএনপি সমর্থকদের, কেউ হয়তো এমনো বলতো যে তারাই বোমাবাজি করতে গিয়েছিল—। আমি ভাবছিলাম আমার ক্ষেত্রে কি হতো – আমাকেও হয়তো কোন দলের কর্মী-সমর্থক দাবী করা হতো- যদিও আমি কোন কালেই তা নই – তারপর কেউ কোন দায়িত্ব নিত না – আমার যন্ত্রণা আমাকেই বইতে হতো -। আমার সহযাত্রীদের অবস্থা আমার কাছে অস্পষ্ট মনে হলো – তারা তাদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল ঠিকই তবে যেহেতু নিজ দলীয় লোকেরাই তা করেছে তাই কোন দলকে তারা দোষারোপ করতে না পেরে সমালোচনা করছিল সাধারণভাবে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে, ক্ষমতার লোভকে। আমি নিশ্চিত তারাও আমার মতই একই রকম অপছন্দ করেছে ব্যাপারটি; একই রকম নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেছে; কিন্তু তারা কখনো দলীয় পর্যায়ে এমন আন্দোলনের পন্থার বিরোধিতা করবেনা বা করতে পারবেনা। যেমন পারিনা আমরা — আর এভাবেই আমরা জিম্মি হয়ে থাকবো রাজনৈতিক নেতা নামধারী গুটিকয় অসৎ-অপরাধীর — যতক্ষণ না আমরা তাদের দেখাতে পারি আসল ক্ষমতা কার হাতে- তাদের না আমাদের – জনগণের; সেজন্যে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় আসতে হবে – কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয় বরং বিষয় ভিত্তিক দাবী নিয়ে — আমারা কি নিজেদের জন্য এটুকু করতে পারিনা ??

বউ হলেই পেটানো যায় ???   Leave a comment

আজ সন্ধ্যায় হাটতে হাটতে আগারগাঁও রেডিও সেন্টারের কোনায় পৌছতেই দেখতে পেলাম একটি খাঁটো গাট্টা-গোট্টা লোক একজন মেয়ের গলা ধরে ধস্তাধস্তি করছে আর সে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে; ২০ গজ দূরেই কিছু রিক্সা আর মানুষ দাড়ানো কিন্তু তারা তা খেয়াল করেছে কিনা বুঝলাম না। আমি একটু খেয়াল করে এগিয়ে গেলাম নারীটিকে ছাড়ানোর জন্য। আমি যখন পুরুষটিকে বলছিলাম নারীটিকে ছেড়ে দিতে তখন আরো কয়েকজন লোক এগিয়ে এলো ও ওকে বাধ্য করলো নারীটিকে ছেড়ে দিতে। এ সময় অত্যন্ত আক্রমনাত্মক পুরুষটি বলতে লাগলো যে নারীটি তার স্ত্রী আর নারীটি তা অস্বীকার করার সব চেষ্টা করতে লাগলো – এটা শুনে যারা এগিয়ে এসেছিলো তারা চলে যেতে লাগলো আর এ সুযোগে পুরুষটি সজোরে নারীটিকে আঘাত করলো। আমি সাথে সাথে বললাম যে অনেক অপরাধীরা নারীদের আক্রমন করার সময় এমন বলে; এটা শুনে যারা চলে যাচ্ছিল তারা আবার ফিরে আসলো। এসময় আক্রমনকারী কারো উদ্দেশ্যে হাক দিলো এগিয়ে আসার জন্য – কিছু তরুন এসে আমাদের আক্রমনাত্মক ভাবে ঘিরে ধরলো এবং আমরা কারা, কেন স্বামী-স্ত্রীর বিষয়ের মধ্যে নাক গলাচ্ছি এসব জিজ্ঞেস করতে লাগলো- আমি সাহস ধরে রেখে বললাম যে আসি একজন পথচারী, নারীটিকে আক্রান্ত দেখে এগিয়ে এসেছি; আরো বললাম যে স্ত্রী হলেই তাকে পেটানো যায় না, এটা অপরাধ; শুনে তারা আশ্বস্ত হলো ও আক্রমনকারীকে বললো বাড়ি যেতে। নারীটি বলতে লাগলো যে সে তার স্ত্রী নয়, আলাদা থাকে, তা্র মেয়েকে ঐ লোকটি তুলো এনে আটকে রেখেছে, সে মেয়েকে দেখতে এসেছিল আর তাকেও আটকে রাখতে চাচ্ছে। এসময় আক্রমণকারী অত্যন্ত ক্ষূদ্ধ হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসলো । তাকে অন্যরা নিবৃত্ত করলো, আর আমাকে বললো চলে আসতে; আমি চলে আসার সময় এগিয়ে আসা আশেপাশের কিছু নারীকে বললাম আক্রান্ত নারীটিকে সহায়তা করতে। পুরুষটি চিৎকার করছিল যে সে নারীটিকে মেরেই ফেলবে তাই আসতে আসতে অনেক চেষ্টা করলাম পুলিশের সাহায্যের জন্য জরুরী নম্বর ৯৯৯ তে ফোন করতে কিন্তু কোন মতেই তাতে সংযোগ পেলাম না। আমি জানিনা নারীটির শেষ পর্যন্ত কি হলো, হয়তো এবারের মত সে মার খাওয়া থেকে বেচে গেছে, নয়তো বাড়িতে আরো বেশী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে —–

কিন্তু আজকের এ অভিজ্ঞতা থেকে কিছু জিনিস আবারো শিখলাম, তা হলো –

  • এখনো আমাদের অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস বউ পেটানো জায়েজ; আর এটা ঘরের বিষয়, অন্যদের নাক গলানো উচিৎ নয়

  • রাস্তায় কেউ আক্রান্ত হলে কেউ প্রথমে এগিয়ে যেতে চায়না, তবে কেউ একজন এগিয়ে গেলে অন্যরা তাতে যোগ দেয়

  • আমাদের আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সাহায্য চাওয়ার সুযোগ এখনো মধ্যযুগে পড়ে আছে; যার আধুনিকায়ন খুবই জরুরী

এমন পরিস্থিতিতে করনীয় সম্পর্কে আমার পরামর্শ

১. কাউকে (বিশেষতঃ নারী) আক্রান্ত হতে দেখলে এগিয়ে যান; চেষ্টা করুন আশে-পাশে যারা আছে তাদের সাথে নিয়ে এগুতে, সংখ্যার শক্তি বড় শক্তি

২. আপনি আগালে দেখবেন অন্যরাও আপনার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে

৩. নিজেরা এগিয়ে যাবার আগেই চেষ্টা করুন জরুরী সাহায্যের জন্য ৯৯৯ বা স্থানীয় পুলিশের নাম্বারে ফোন করতে (যদি পাওয়া যায় তবে তাদের আসতে সময় লাগবে তাই যত আগে তাদের খবর দেয়া যায় তত ভাল)

৪. নিজে যখন সাহায্য করতে যাবেন তখন যতদূর সম্ভব শান্ত থাকবেন; উত্তেজনা বা আক্রমনাত্মক আচরণ করবেনা

৫. কোন রকম দূর্বলতা বা ‘নার্ভাসনেস’ যেন আপনার আচরণে প্রকাশ না পায়

৬. বলূন যে যদি কোন অভিযোগ থাকে তা পুলিশকে জানাতে, নিজে কাউকে আক্রমণ না করতে; কাউকে আক্রমণ করা যে অপরাধ তা স্মরণ করিয়ে দিন

৭. নারীর উপর আক্রমণ, এমনকি স্ত্রী বা পরিবারের অন্য যে কোন সদস্য হলেও যে ঘৃণ্য অপরাধ তা মনে করিয়ে দিন

৮.এ ধরণের আক্রমণকারীরা সাধারণতঃ মানসিক ও নৈতিকভাবে দূর্বল হয় যা তারা ঢাকার চেষ্টা করে আক্রমনাত্মক আচরণ দ্বারা, আপনি শান্ত ও যৌক্তিক আচরণ করলে তারা মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়বে

৯. যদি তার পক্ষ নিতে কেউ আসে তাকেও বুঝিয়ে বলূন কেন কাজটি খারাপ এবং তাকেই অনুরোধ করুন তা থামাতে

১০.সব সময় সতর্ক থাকবেন, যাতে আপনি নিজে না আক্রান্ত হন; প্রায় সবক্ষেত্রেই আপনি সফল হবেন

১১. যদি কখনো আক্রান্ত হন তবে যতদ্রুত সম্ভব দৌড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান এবং অন্যদের সাহায্য নিন, দাড়িয়ে থাকবেন না

সবাইকে এসব বিষয়ে সচেতন করুন, যখনি সম্ভব—-

ইনকিলাব ও জামাতীদের আওয়ামীকরণ   Leave a comment

ইনকিলাব পত্রিকা অতি সম্প্রতি একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে কিছু সরকারী দলিলের ছবি সহ (http://einqilab.com/2014/01/16/index.php) – যার বক্তব্য ছিল যে বর্তমান সরকার ভারতের সাহায্য নিচ্ছে সাতক্ষীরা অঞ্চলে জামাতীদের দমনে। সংবাদটি এমন, যেন এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপের মত একটি বিষয় আর এর ভিত্তি ফেসবুকে পাওয়া কিছু সরকারী কাগজপত্রের ছবি যা যারা ফেসবুকে দেখেছেন তাদের অনেকে নিজেরাই জালিয়াতি বলে ধরতে পেরেছেন অথচ সংবাদপত্রের অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা তা পারলেন না, যাদের যে কোন সংবাদ প্রকাশের আগে তা বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখার কথা। সংবাদটি অত্যন্ত গুরুতর কারণ যেভাবে এটা করা হয়েছে তা শুধু সাংবাদিকতার নৈতিকতার ভয়াবহ লংঘনই নয়, তা দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরীর অপচেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি; পাশাপাশি এটা কৌতুককরও এজন্য যে এ ইনকিলাব যা বহু বছর ধরে জামাত-শিবিরের মুখপাত্র ছিল তা এর প্রতিষ্ঠাতা রাজাকার মান্নানের মৃত্যুর পর কয়েক বছর আগে মোটামুটি ঘোষণা দিয়েই আওয়ামীলীগ বা এর সরকারের ‘সমর্থন’ করতে শুরু করে। অনেকে তখন বলেছিল যে মান্নান-পুত্র বাবার মৃত্যুর পর জামাতের সাথে স্বার্থের সংঘাতে আওয়ামীলীগের দিকে ঝুঁকেছে। আর সেই ইনকিলাবই এখন আচমকা আওয়ামীলীগের দিকে এক মারণ-শেল ছুড়ল। এটা নিশ্চিতভাবেই জামাত-বিএনপি জোটের পক্ষে এবং চরিত্রগতভাবে জামাতী পদক্ষেপ। এটা এ ইঙ্গিতই দেয় যে সাময়িকভাবে আওয়ামীলীগের পক্ষে দেখালেও চুড়ান্তভাবে ইনকিলাব জামাতীই রয়ে গেছে — । এ ঘটনাটি আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে এখন আলোচনা শোনা যাচ্ছে জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করা হলে যারা আওয়ামীলীগে যোগ দিবে তারা রাজনৈতিকভাবে পূর্ণবাসিত হবে। সম্পতি আওয়ামীলীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা পাবনায় এক জামাতীকে ‘আওয়ামীতে’ রূপান্তর করে তার কৃতিত্ব দেখানোর পর তার দলের আরো কিছু কীর্তিমান নাকি একই পথ অনুসরণ করেছেন, আর তাতেই এ আশঙ্কা আরো জোরালো হয়েছে। এ কাজের জন্য ঐ নেতা পুরষ্কৃত হয়েছে বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। তাই আওয়ামীলীগ এখন ভেবে দেখতে পারে ঐ জামাতীরা সময় বুঝে ইনকিলাবের মতই ডিগবাজী দিয়ে যখন তাদের বাঁদর নাচ নাচাবে তারা তা সামলাতে পারবে কিনা? আর তারা যদি মনে করে, আওয়ামীলীগ বা এর জাতীয়-স্থানীয় পাতি নেতাদের দলে ভেড়াই সব পাপ মাফ হবার একমাত্র শর্ত, তবে তাদের এটা মনে রাখতে হবে যে এদেশের মানুষ কারো কাছে মাথা বাধা রাখেনি, তারা অত্যন্ত বুদ্ধিসম্পন্ন ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন, তাদের বোকাও বানানো যাবেনা, নিস্ক্রিয়ও রাখা যাবেনা, তারা সব অপরাধের হিসাব নিবে পাই পাই করে- তা কালই হোক আর চল্লিশ বছর পর। জামাতীদের আওয়ামীকরণের প্রবক্তাদের এটাও ভেবে দেখা উচিত ছিল যে জামাতীদের সাথে আশনাইয়ের ফলে বিএনপি’র কি হয়েছে- বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে তাদের অবস্থান পুরোপুরি হারিয়েছে, সেই সাথে হারিয়েছে জনগণের একটি বড় অংশের সমর্থন, হারিয়েছে দেশের বৃহত্তম দুটো রাজনৈতিক দলের একটি হিসেবে এককভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা, এমনকি সাংগঠনিক শক্তি ও জন-সম্পৃক্ততাও অনেকাংশে। জামাতী ঘুণপোকা বিএনপিকে ভেতর থেকে ফোঁপরা করে ফেলেছে। জামাতীদের নিজেদের দলে স্থান দিলে আওয়ামীলীগের অবস্থা যে একই রকমের হবে তা বুঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই। আর আওয়ামীলীগের মধ্যে যে ইতোমধ্যেই জামাতীরা ছদ্মবেশে লুকিয়ে নেই তা ভাবার কারণ নেই- আমার পরিচিত জামাতের এক রোকনের পুত্র ছাত্র জীবনে শিবির কর্মী ছিল কিন্তু সাংবাদিকতায় যোগ দিয়েই সে হয়ে গেল আওয়ামীলীগের সাথে ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিক নেতার উপদলের সক্রিয় কর্মী। আমার এক সহপাঠী বর্তমানে জামাত অধ্যুষিত অঞ্চলের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সে শিক্ষকও হয়েছে নাকি জামাতী যোগাযোগের ফলেই কিন্তু ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে নাম লিখিয়ে ছিল, অথচ অনেকেই তখনই জানতো যে সে আসলে শিবির কর্মী, তার পরিবারের জামাত সম্পৃক্ততা ও রাজাকারীর ইতিহাস। এটা জামাতের দলীয় কৌশলেরই অংশ, বিভিন্ন দল ও প্রতিষ্ঠানে নিজেদের ছদ্মবেশী কর্মী ঢুকিয়ে তাদের দিয়ে ক্ষমতা কূক্ষিগত করা; নিদেনপক্ষে দলের কর্মী-সমর্থকদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দেয়া। তারা এভাবেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে তাদের দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, ব্যাংক-বীমা, হাসপাতাল-ব্যবসা ফেঁদেছে। একই প্রক্রিয়ায় তারা বিএনপিকে তাদের উপর নির্ভরশীল করেছে। এখন মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগের পালা। আওয়ামীলীগকে পাশাপাশি পুরো দেশকে এমন ঝুঁকির মুখে ফেলার পর, স্বাধীনতা বিরোধী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী, তাদের আদর্শে বিশ্বাসী ও সমর্থকদের পূর্ণবাসন করার সুব্যবস্থা করার পরও সেসব আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বা দলের মধ্যে কোন জোরালো সমালোচনাও না হওয়ায় এ আশঙ্কাই তীব্র হচ্ছে যে আওয়ামীলীগ আদর্শিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, এমনকি নিজেদের ভাল হবে কিসে সে বোধও তাদের ভোঁতা হয়ে গেছে অথবা আওয়ামীলীগে ঘাপটি মেরে থাকা জামাতীরা এখন বোধহয় যথেষ্টই শক্তিশালী।

জলে কুমির-ডাঙায় বাঘঃ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে ভাবনা   1 comment

আমি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক জটিল আদর্শিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক হেয়ালীতে/দ্বন্দ্বে আছি।

আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আমার আশৈশব রাজনৈতিক-আদর্শিক শিক্ষা ছিল সাম্য, অসাম্প্রদায়িকতা, মানুষের প্রতি সম্মান আর শান্তির উপর ভিত্তি করে। আমার পরিবার আমার ধর্মশিক্ষার উপর যথেষ্ট যত্নবান ছিলো, আমিও শৈশবে ছিলাম বেশ ধর্মপ্রাণ; কিন্তু তা কখনোই আমার অন্য ধর্মের বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সাথে মিশতে বাধা হয়নি। প্রতিবেশীর পুজোর অনুষ্ঠানে যাওয়া, তাদের নিজেদের উৎসব-পরবে আমন্ত্রণ করা এসবে আমাদের যথেষ্ট উৎসাহ ছিল। ছাত্রজীবনে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না থাকলেও সক্রিয় ছিলাম সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা আন্দোলনে সক্রিয়তার পাশাপাশি তৎকালীন ছাত্রলীগের গুন্ডাদের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদ করে হল ছাড়াও হয়েছি।

আমি কখনোই আওয়ামীলীগ বা বিএনপি’র ভক্ত ছিলামনা । রাজনৈতিক দল হিসাবে বা তাদের নেতা-কর্মীদের আচরণ সাধারণতঃ বিরক্তিই উৎপাদন করতো, এখনো তাই। আমি সম্ভবত ঐ দলের যারা স্বপ্ন দেখতো বা দেখে: দেশে কিছু রাজনৈতিক দল তৈরী হবে যারা জনগণের স্বার্থ, আশা-আকাঙ্খা মাথায় রেখে কাজ করবে, জনগণ ও জনমতকে শ্রদ্ধা করবে। যারা সরকারেই থাকুক আর বিরোধীদলে, সর্বদা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। আমি এখন পর্যন্ত খুব আশাবাদী হবার মত কিছু খুজেঁ পাচ্ছিনা। এমন অবস্থায়- দেশে সরকারের মেয়াদ শেষ কিন্তু এক সরকার থেকে পরবর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়া কি হবে তা নিয়ে চলছে মতানৈক্য, অব্যবস্থাপনা আর অরাজকতা; বর্তমান সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দূর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত, তাদের গুন্ডামী-অপরাধপ্রবণতা দল ও সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকেও সরকার নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে বলে অনেকের অভিযোগ, পাশাপাশি ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য তারা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বা এ সরকারের অধীনে সুষ্টু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম, এমন বিশ্বাস জনগণের একটি বড় অংশের। বিরোধীদলের উপর রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দমন-পীড়নও অসন্তুষ্টি তৈরী করেছে অনেকের মধ্যে। কাজেই এ মুহুর্তে তাদের পছন্দ করার মত বেশী কিছু নেই। দূর্ভাগ্যজনকভাবে সম্ভাব্য বিকল্প হলো প্রধান বিরোধীদল যাদের সীমাহীন দূর্নীতি, যুদ্ধপরাধী-রাজাকার জামাত-শিবিরের সাথে সম্পৃক্ততা, জঙ্গীবাদে মদদ, অন্যধর্ম ও জাতির জনগণের প্রতি নিপীড়ণে সমর্থন ক্ষমতাসীনদলকে বিগত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পেতে সবচেয়ে বেশী সাহায্য করেছিল। তারা ভোটে জনগণের রায়ে শোচণীয় ভাবে পরাজিত হবার পরও এমন কিছুই করেনি যা থেকে মনে হতে পারে তারা তাদের অতীত অপরাধ বা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে (এটা আওয়ামীলীগের জন্যও সমান সত্য)। বরং তারা সংসদে অনুপস্থিত থেকেও যাবতীয় সরকারী সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বাচানোর জন্য দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্খার বিরুদ্ধে গিয়ে জামাত-শিবিরকে সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বরং জনগণের বিরুদ্ধে তাদের সহিংসতায় অংশ নিয়েছে। সবশেষে, রাস্তায় বোমা মেরে, বাসে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে, রেললাইন খুলে রেখে গাড়ি ফেলে মানুষ হত্যা করে,রাস্তা-ব্রিজ, সরকারী অফিস সহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে চাইছে সরকারের প্রতি মানুষকে ক্ষেপিয়ে দিতে বা একে বেকায়দায় ফেলতে। পাশাপাশি, তারা যেভাবে এখনি জামাত-শিবিরের সাথে মিলে সরকারী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা করছে, অন্যধর্ম ও জাতির সদস্য ও সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ-অত্যাচার করছে তা ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী তাদের সহিংসতা-নির্যাতনকে শুধু মনে করিয়েই দিচ্ছেনা বরং তা ইতিমধ্যেই বহুগুনে ছাড়িয়ে গেছে।

আমার সমস্যা হলো- আমি চাইনা একতরফা নির্বাচন হোক, আমি চাইনা আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় গিয়ে তাদের দূর্নীতি চালু রাখার সুযোগ পাক। কিন্তু, বিএনপি ছাড়া আর যে সব দল আছে তাদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসী, খুনী, ধর্ষক, অন্যধর্ম ও জাতির জনগণের উপর অত্যাচারকারী, ধর্ম-ব্যবসায়ী, প্রতারক জামাত-শিবিরকে তো সমর্থনের প্রশ্নই আসেনা (বরং আমি এ দল ও এর সব সদস্যের এ দেশে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করতে জোর দাবী জানাই); ব্যক্তিত্বহীন, অসৎ, পতিত স্বৈরাচার এরশাদও বিবেচনায় আনার যোগ্য নয়। আর যে সব “আওয়ামী” বা “জাতীয়তাবাদী” জোটের নানান লেবাস ও কিসিমের ‘গৃহপালিত’ নাম-সর্বস্ব দলগুলো আছে সেগুলো বড় বড় কথা বললেও নিজেরা সামান্য সুযোগ পেলেও কতটা অসৎ হতে পারে তা তো এরই মধ্যে আমরা জেনে গেছি। আর আমরা গত কয়েক বছরে যে সব তাত্ত্বিক সম্ভাবনা বিচার করছিলাম- ‘সুশীল সমাজ’, গরীবের রক্তচোষা ছ্যাবলা ধান্দাবাজ ‘ইউনুস সমাজ’, অবসরপ্রাপ্ত দূর্নীতিবাজ ও সাবেক সব সরকারের পা-চাটা ‘আমলা সমাজ’, কোনটাই যে আমাদের কোন আশা দেয়ার মত কিছু না তাও প্রমাণিত। তাই শেষ পর্যন্ত অবস্থা যা দাঁড়ায় তাতে আমার বেছে নিতে হয় জলের কুমির বিএনপি আর ডাঙার বাঘ আওয়ামীলীগের মধ্য থেকে কোন একটাকেই।

আর আওয়ামীলীগ বা বিএনপি’র যেটাকেই বেছে নিই সম্ভবতঃ এর গুন্ডাদের দৌরাত্ম আরও বাড়বে, দূর্নীতি বাড়বে, পরিবারতন্ত্র পোক্ত হবে, বিরোধীদলের উপর রাষ্ট্রযন্ত্রের দমন-পীড়ন বাড়বে, যারা জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলে বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তাদের কাজ আরও কঠিন হবে কারণ চলমান সহিংসতা ঠেকাতে বা এ থেকে জনগণ ও সম্পদ রক্ষা করতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো যে আক্রমনাত্বক আচরণ রপ্ত করছে তার ঝাঁঝ তাদের সইতে হবে।(আমি নিজেকেও শীঘ্রই তাদের মাঝে সে ঝাঁঝের মুখে খুজেঁ পাব বলে আশা করছি।) মোটকথা মানুষের অধিকার ও ন্যায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের যে ধারা গত কিছু দিন যাবৎ গড়ে উঠছিল, তা আরো কঠিন হয়ে যাবে আশঙ্কা করছি। আমি জনগণের স্বার্থ, দেশপ্রেম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আদর্শ বা নৈতিকতার ক্ষেত্রেও এ দুটো দলের মাঝে খুব বেশী পার্থক্য দেখি না।

কিন্তু একটা জায়গায় আমি পার্থক্য দেখি, প্রথমতঃ বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে আসছে আর জামাতের প্রতি যে তীব্র ভালবাসা দেখাচ্ছে তাতে তাদের বেছে নিলে তারা জামাত-শিবিরকে ক্ষমতার অংশীদার করবে, জামাত-শিবিরের শক্তি আরো বাড়বে, তারা মন্ত্রী-এমপি হবে, পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হবে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ও প্রগতিশীল মানুষদের তারা দমন করার চেষ্টা করবে। সুপ্রিম কোর্টে বিএনপির নেতৃস্থানীয় আইনজীবীরা এরই মধ্যে ঘৃণিত রাজাকার কাদের মোল্লার গায়েবানা জানাজা পড়েছে, এমনকি তাকে ‘শহীদ’ বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ জামাতের সাথে কখনো ক্ষমতা ভাগাভাগী করেনি, তাদের বিরুদ্ধে জামাতের সাথে আতাঁত করে কম শাস্তি দেয়ার ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ ছিল কাদের মোল্লার ফাঁসির মাধ্যমে তারা তা কিছুটা হালকা করতে পেরেছে। দ্বিতীয়তঃ ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী ও সাম্প্রতিক সহিংসতার অভিজ্ঞতা আমাকে দেশের অন্য ধর্ম ও জাতি এবং অন্য দলের মানুষদের জন্য বিএনপিকে বেশী বিপজ্জনক ভাবতে বাধ্য করছে। অন্যধর্ম ও জাতির সদস্য, অন্য দল ও সাধারণ মানুষের উপর তারা এখনি যেমন আক্রমণ-অত্যাচার করছে তাতে তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে কেউ জানেনা। আর এর সাথে জামাত-শিবিরের অপরাধীদের যোগ করলে তা অত্যন্ত ভয়ংকর চিত্রই তুলে ধরে। এটা এ আশঙ্কাকেও বাড়িয়ে তোলে যে তারা- অধিকার ও ন্যায়ের জন্য যারা কথা বলবে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, মুক্তচিন্তা ও বাক-স্বাধীনতার চর্চা করবে তাদের জন্য বেশী বিপজ্জনক হবে।

জলের কুমির আর ডাঙার বাঘ এর মধ্য থেকে বেছে নেবার প্রশ্ন হলেও আমার পক্ষে সম্ভব নয় এদেশের সাথে, একে স্বাধীন করতে আমাদের যে পূর্বসূরীরা রক্ত দিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন, তাদের সাথে বেঈমানী করা। আমার পক্ষে সম্ভব নয় স্বাধীনতা বিরোধী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী, রাজাকারদের পক্ষ নেয়া কাউকে সমর্থন করা । আমার পক্ষে সম্ভব নয় নিরপরাধ সাধারণ মানুষ হত্যাকারীদের, তাদের উপর আক্রমণ কারীদের সমর্থন করা। আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামাত-শিবিরের বিলুপ্তি দেখতে চাই; কারণ আমি সহিংসতার রাজনীতির অবসান চাই। তাই কেউ যদি সন্ত্রাসী-রাজাকার জামাত-শিবিরকেই আপন ও মূল্যবান ভাবে, আর নেতিবাচক সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারা অব্যাহত রাখে, আমার কাছে তার কোন স্থান নেই।

ভাবছেন আমার মত এমন আম-জনতার পছন্দ-অপছন্দে কি আসে যায়? এটা ঘটা করে বলার কি আছে? আছে , কারণ আমি একা নই, আমার মত মানুষের সংখ্যা এদেশে কম নয়।

প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা ও ছাড় দেয়ার মানসিকতা ও আমাদের ভবিষ্যত   Leave a comment

জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তারানকো সাহেব এসে সপ্তাহব্যপী দুতিয়ালী করে বলে গেলেন প্রধান দুই দল সদিচ্ছা ও ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে আলোচনা করলেই সমাধান সম্ভব। তার এ কথায় আমাদের টেলিভিশনের ‘প্যাচাল অনুষ্ঠানের’ নিয়মিত আলোচকরা উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন যে তারা যে কথা গত দু’বছর যাবৎ বলছেন তাই তো বললেন তারানকো সাহেব, এ আর নতুন কি? তারা দেশী আদমী বলে তাদের কথা সেভাবে পাতে তোলা হয়নি । কথাটা মিথ্যা না, তবে তার সাথে যোগ করে বলতে হয় যে তারা যেমন দিন শেষে নিজ নিজ গোয়ালে উঠেন আর অনুষ্ঠানেও দলের পাতে ঝোল টানেন, তারানকো সাহেব বোধ হয় তা করেননি। আর তিনি দুই পালের গোদাদের এক খাটালে কিছুক্ষণের জন্য জাবনা দিতে পেরেছিলেন যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের নেত্রীকে ফোন করেও করতে পারেননি। মনে হয় এটা পুরনো অভ্যাস, ঔপনিবেশিক কাল থেকে এদের রাখালীতে অভ্যস্ত এদেশের রাজনীতির পান্ডারা রাখাল ছাড়া নিজেদের একটু অনিরাপদ মনে করে। যা হোক, জাতিসংঘের চাপে আর সাথে অন্য যে কোন কারণে হোক, আলোচনায় বসলেই কি এ অবস্থা থেকে পুরো জাতির মুক্তি পাবার কোন আশু সম্ভাবনা আছে কিনা?

এবার দেখা যাক আমাদের রাজনীতি বা রাজনীতির পান্ডাদের চরিত্র কেমন? সবচেয়ে বেশী দেখা গেছে যেভাবেই হোক যত বেশীদিন সম্ভব ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা, অথবা অন্যভাবে বলতে গেলে ক্ষমতার বাইরে থাকার ভীতি। এর একটি কারণ যেমন ক্ষমতার দই-মিষ্টির লোভ তেমনি ক্ষমতাসীন দলের দমন-পিড়নের ভয়। রাজনীতির প্রধান দলগুলো এমন এক শত্রুতার আবহ তৈরী করেছে যে এমনকি তাদের পান্ডাদের মধ্যে পারষ্পারিক শ্রেণীগত বিয়ে-শাদী, ব্যবসা, ভাগ-বাটোয়ারার সম্পর্ক থাকার পরও কারো কারো জেল খাটতে হয়, দেশ ছাড়তে হয়, মামলা খেতে হয় বা পুলিশের প্যাদানী সইতে হয়। আর কয়েক বারের ক্ষমতা বদলের পালাক্রমে এসব শোধ-প্রতিশোধের হিসাব এত জমে গেছে যে এখন কেউই আর ক্ষমতা ছাড়তে চায়না। বাস্তবতা হলো যে একপক্ষই মসনদে থাকে, বাকিরা বাইরে কিন্তু এ বাস্তবতা মেনে নিতে যেন তাদের বড়ই আপত্তি। ক্ষমতা ছাড়া হলে যেন তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়, তারা যে কোন উপায়ে তা ফিরে পেতে প্রায় ‘ভাদ্র মাসের কুকুরের’ মত আচরণ করে, যেমনটা করে ক্ষমতাসীনরা টিকে থাকতে। এক্ষেত্রে তারা জনমত বা জন-সমর্থনের থোড়াই কেয়ার করে । তারা জন সমথর্ন আদায় বা জন-কল্যাণের কোন চেষ্টা না করে, করতে থাকে নানা ষড়যন্ত্র, কারসাজি (এ বিষয়ে আমার পূর্বের লেখায় ব্যাখ্যা আছে, দেখুন- http://wp.me/p1JhsE-3C)।  আর বর্তমান রাজনীতির পান্ডাদের মধ্যে জন-সম্পৃক্ত রাজনৈতিক কর্মীর চেয়ে লুটেরা ব্যবসায়ী, দূর্নীতিবাজ সাবেক আমলা আর গুন্ডা, পেশাদার অপরাধীর সংখ্যাই বেশী, তারা যখন দলের নীতি নির্ধারণ প্রভাবিত করে তখন জনগণকে মনে করে বলির পাঠা, তাই জন-বিচ্ছিন্নতাও বাড়ছেই।

এমন অবস্থায় বিরোধীদল ক্ষমতায় যেতে বা সরকারী দলকে বিপদে ফেলতে রাস্তায় মানুষ পোড়ায়, বোমা মারে, রেললাইন খুলে রেখে গাড়ি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যা করে, যেগুলো কোন যুদ্ধাবস্থায়ও সাধারণত হয় না।তারপরও তারা কোন দূঃখ প্রকাশ করেনা, এসব থেকে বিরত থাকতে তাদের দলীয় ক্যাডারদের একটি বারও বলেনা, উল্টো নির্লজ্জভাবে বলে যে এসব করছে সরকারী দলের লোকেরা বা আরও ঔদ্ধত্ত দেখিয়ে বলে সরকার তাদের এসব করতে বাধ্য করছে। অন্যদিকে সরকারী দল বিরোধীদের সাথে সমঝোতা করতে, সংঘাতের অবসান ঘটাতে অথবা জনগণের শত্রু এসব অপরাধীদের ধরতে, শাস্তি দিতে, জনগণের নিরাপত্তা দিতে তেমন গা করেনা। হয়তো এ আশায় যে এতে জনসমর্থন তাদের দিকে ঝুঁকবে। এমনকি বিরোধীরা যদিও বলে ক্ষমতাসীন দল এসব করাচ্ছে তাদের উপর দায় চাপাতে, যখন ক্ষমতায় যায় তখন তারা এসবের কোন বিচার করেনা।উতোর-চাপান চলতেই থাকে কিন্তু দু’পক্ষই যেহেতু একই দোষে দোষী, কেউই এসব নিয়ে ঘাটায়না, কারণ সাধারণ জনগণের ভালমন্দ নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই আর ঘাটাঘাটি করলে নিজেদেরও ফেসেঁ যাবার ভয় আছে। এমন একটি অবস্থায়  ‘প্রধান দুই দলের সদিচ্ছা ও ছাড় দেয়ার মানসিকতা’ কতটুকু আশা করা যায়? কিসের ভিত্তিতে?

এক্ষেত্রে আরেকটি বড় ‘গলার কাঁটা’ হলো জামাত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। প্রধান বিরোধীদলের সাথে তাদের গাটছড়ার কারণে নির্বাচনে নিষিদ্ধ এ দলটিকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচন বা সমঝোতায় কতটুকু আগ্রহী হবে তা একটি প্রশ্ন, আরেকটি প্রশ্ন হলো মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী যারা জামাতকে নেতৃত্ব দিত তাদের নিয়ে কি করা হবে তা বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে কিভাবে প্রভাবিত করবে। অনেক ‘ওয়াকিবহাল’ মহল বলছেন যে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দিক থেকে কিছুটা নমনীয়তা দেখানোর পরও সমঝোতার চেষ্টা আগাতে পারেনি কারণ এ মূহুর্তে বিএনপি নির্বাচনে, এমনকি ক্ষমতায়, যেতেও আগ্রহী নয় কারণ তাহলে তাদের এ কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে যেখানে হয় তাদের নিজেদের রাজনৈতিক সহযোগীদের ফাসিঁর দড়িতে ঝুলাতে হবে অথবা তা না করে দেশের বেশীরভাগ মানুষের রোষ সামাল দিতে হবে। তাই তারা চাচ্ছে সময় ক্ষেপন করতে যাতে কোন প্রকারে আওয়ামীলীগকে নতি স্বীকার করাতে পারে যাতে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পর যাই করুক প্রতিরোধের মুখে পড়তে না হয় আর মানুষকে আন্দোলন-প্রতিবাদে বিরক্ত, ক্লান্ত করে তোলা যায় যেন যুদ্ধাপরাধীদের সাজা না দিলেও প্রতিরোধ তেমন তীব্র না হয়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল জানে তাদের জন-সমর্থন সুবিধার না, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে গো-হারা হেরেছে, তার পর এমন কিছু করতে পারেনি যে তা বদলে যাবে, তাদের ভরসা তাদের ভোট ব্যাংক, আর যেন-তেন একটা নির্বাচন। বিরোধীদল না থাকলে তাদের সুবিধাই হয়।

এটা যদি সত্য হয়, তবে আমাদের রাজনীতির পান্ডাদের বেপরোয়া ক্ষমতার খায়েশ আর জনগণের প্রতি অবজ্ঞা-উপেক্ষার পাশাপাশি সন্ত্রাসী-যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবিরের প্রভাব যদি ক্ষমতার রাজনীতির এ হিসাবে যোগ হয় হবে ‘সদিচ্ছা ও ছাড় দেয়ার মানসিকতা’র সন্ধান পাওয়া বেশ কঠিনই হবে।

তাহলে আমরা কি করবো? এ আশায় বসে থাকবো যে কবে পান্ডাদের চরিত্র বা মানসিকতা ভাল হবে? নাকি আমাদের কিছু করনীয় আছে?

আমাদের করনীয় অনেক কিছুই আছে, তবে প্রশ্ন হলো আমরা যেভাবে দু’গোয়ালে বিভক্ত তাতে আমরা তা করতে পারবো কিনা?

 

Posted December 15, 2013 by Abu Ala in Politics

Tagged with , , , , , ,

তত্ত্বাবধায়কের রাজনীতি ও গণতন্ত্র   Leave a comment

অতি সম্প্রতি একটি আলোচনা শুরু হয়েছে আমাদের সরকার পরিবর্তনের পদ্ধতি বা সে সময়ের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে; টিভির কিছু নিয়মিত ‘প্যাচাল অনুষ্ঠান‌’ এর বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে কেন আমরা একটি স্থায়ী ব্যবস্থার দিকে না গিয়ে বারবার একটি অস্থায়ী ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি আর প্রতি পাঁচ বছর পর পর একটি সংকট তৈরী করছি, অযথা প্রাণহাণী ঘটাচ্ছি ও অর্থনীতির বারোটা বাজাচ্ছি। তাদের বক্তব্য হলো আমরা স্বল্পমেয়াদী সমাধান পছন্দ করি । শুনে বেশ মজা পাচ্ছি । কারণ এতদিন সবাই তথাকথিত “তত্ত্বাবধায়ক সরকার” বিষয়ক আলোচনার বেড়াজালেই ঘুরপাক খাচ্ছিলেন। আমি ফখরুদ্দিনের ছদ্মবেশী সামরিক শাসন শুরু হবার সময় থেকেই বলে আসছি যে, তখনই ওটা মরে গেছে, ওটার দাফন সম্ভব, পুনর্জন্ম নয় । বিগত এক দশকের অভিজ্ঞতার পর তা না ভাবলে যে কারো মস্তিষ্কের যৌক্তিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে । আর খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক “তত্ত্বাবধায়ক সরকার” ফমূর্লা এর অবাস্তবতা ও অসাড়তাকে আরো প্রকট করে তুলেছে। তার পরও কেন “তত্ত্বাবধায়ক সরকার” নিয়ে এত সব ধুন্ধুমার কান্ড-কারখানা হলো ও হচ্ছে তা কি শুধু “আমরা স্বল্পমেয়াদী সমাধান পছন্দ করি‍” বলে? আর করলেও কেন করি? এর উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এ সমস্যার কারণ ও সমাধান। আমাদের পেশাদার রাজনীতিকারীরা (ও তাদের সাথে যে খন্ডকালীনরা আছে) জানে বর্তমান প্রধান দুই দলের বাইরে আর যে সব দল আছে তাদের তৃতীয় শক্তি হয়ে উঠার কোন সম্ভাবনা নেই, কারণ সেসব দলও কোন ভাবেই এ দুটোর থেকে আলাদা নয়, কোন কোনটি বরং আরো বেশী খারাপ; উপরস্তু সেসব দলের নেতারা বড় দল দুটোর উচ্ছিষ্টভোগীর ভুমিকাতেই সন্তুষ্ট। তারা আরো জানে এদেশের বেশীরভাগ মানুষের রাজনৈতিক আনুগত্য উত্তরাধিকার ভিত্তিক ও বংশানুক্রমিক, যা সুদীর্ঘ সামন্তবাদী প্রথারই ধারাবাহিকতা। এখানে চাপিয়ে দেয়া পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী ধারার কোনটিই তেমন শিকড় গেড়ে উঠতে পারেনি এখনো, একই কথা সত্য ‍‘গণতন্ত্রের’ ক্ষেত্রেও, যা তাত্ত্বিকভাবে ঐ দুটো ধারারই মূল কথা। ‘চাপিয়ে দেয়া (পুজিঁবাদী) গণতন্ত্রের ধারণা’ যেসব দেশ থেকে আমদানীকৃত তা সেখানে যে ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে তা না ঘটায় সে ব্যবস্থা কাজ করার পেছনে যে সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো দরকার তা এখানে গড়ে উঠেনি। কাজেই, বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক আনুগত্য মতাদর্শিক বা নেতাদের কর্মের মূল্যায়নের ভিত্তিতে না হয়ে হয় ক্লাবের সমর্থনের মত আবেগ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্ভর অথবা উত্তরাধিকার সূত্রীয়; আর এর সাথে যোগ হয় স্থানীয় ক্ষমতার প্রতিযোগিতা। এর ভিত্তিতে তারা মনে করে যে তারা যাই করুক না কেন ভোটের সময় বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সময় তাদের সমর্থকরা তাদেরই সমর্থন করবে। আর তারা প্রায় পুরোপুরি সঠিক; যদিও প্রধানতঃ শিক্ষিত শহুরে শ্রেণীর মধ্যে এর সামান্য কিছু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। তারা আরো জানে দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বেশীরভাগ কর্মচারী সক্রিয় বা সুপ্তভাবে দু’দলের সমর্থনে বিভক্ত। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের সমর্থকদের দাপট একটু বেশী থাকে; তবে পটপরিবর্তনকালীন সময়ে সবাই নিজ নিজ পছন্দের দলের পক্ষে কাজ করে। আর সংখ্যার হিসেবেও তারা প্রায় সমান-সমান। এছাড়া তারা এটাও জানে দলের সমর্থকদের বাইরে যারা আছে তাদের ভোট পাওয়ার মত কোন জন কল্যাণমূলক ভুমিকা বিরোধী দলে থাকতে তারা রাখে না; সরকারে থাকা দলের ক্ষমতার অপব্যবহার, দূর্নীতি আর সন্ত্রাসের কারণে এসব  মানুষ তাদের উপর তুলনামূলকভাবে বেশী বিরক্ত থাকে ও তাদের বিরুদ্ধে ভোট দেয়; বিকল্প কিছু না থাকায় সেসব পায় বিরোধী দল। আর এ কারণেই না ভোটের সুযোগটি তুলে দিতে সরকারী দলের চেয়ে বিরোধীদের উৎসাহ কোন অংশে কম ছিলনা। মোদ্দাকথা হলো যেহেতু তারা কেউই জনগণকে সন্তষ্ট করার মত কিছু করেনা বলে নিজেরা ভালভাবেই জানে তাই তারা কোন মতেই নির্বাচনের ফলাফল জনগণের ইচ্ছার হাতে ছেড়ে দিতে চায়না; চায় ছলে বলে কৌশলে তা নিজের পক্ষে নিতে; আর সেটা হাসিল করতে জনগণের জান-মাল, নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা কিছুরই তোয়াক্কা করেনা। যদি নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্টু হয়  তবে তা প্রভাবিত করার সুযোগ থাকেনা আর ফলাফল জনগণের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পরে; যা কোন দলই চায়না। কিন্তু এর সাথে “তত্ত্বাবধায়ক সরকার” বা “স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান” এর সম্পর্ক কি? বিএনপি চায় “তত্ত্বাবধায়ক সরকার” যা কে বলা হচ্ছে “স্বল্পমেয়াদী সমাধান”। বিএনপি এটা চায় কারণ এতে তাদের তিনটি উদ্দেশ্য পূরণ হয়- প্রথমতঃ তারা দেখাতে পারে যে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করেছে তাদের দাবী মানতে, যা জনগণের কাছে তাদের অধিক শক্তিশালী দল হিসেবে তুলে ধরবে সরকারী দলের দূর্বল চেহারার বিপরীতে; দ্বিতীয়তঃ সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের যে সমর্থকরা আছে তারা নির্বাচন প্রভাবিত করতে অধিক ভুমিকা রাখতে পারবে; আর তৃতীয়তঃ সরকারী দলের নির্বাচন প্রভাবিত করার বেশীরভাগ পথই যে বন্ধ করা যাবে তাই নয়, তাদের কোনঠাসাও করা যাবে। এটা যদি তারা শুধু নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাইতো তবে, তাদের লক্ষ্য হওয়ার কথা ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা যাতে কোন কারচুপি হতে না পারে; কার অধীনে নির্বাচন হবে তা নয় কারণ এরই মধ্যে এটা প্রমাণিত হয়েই গেছে যে এখন তথাকথিত “নিরপেক্ষ ব্যক্তি” পাওয়া অসম্ভব আর তেমন কাউকে পাওয়া গেলেও নির্বাচনে পরাজিত দল পরে তাদের পক্ষপাতিত্বের দায়ে অভিযুক্ত করবে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপি’র জয় প্রমাণ করে সরকারী দলের উপর জনগণ যথেষ্ঠ বিরক্ত তাই সে ভোটগুলো বিরোধীরা পেয়েছে। পাশাপাশি এটাও প্রমাণ হয়েছে কোন দল ক্ষমতায় থাকলেও যথাযথ নজরদারীর মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আর আওয়ামীলীগ চায় ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে যাতে তারা প্রশাসনকে তাদের মত করে সাজিয়ে, তাদের সমর্থকদের ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে; তাদের সংবিধান বা গণতন্ত্র প্রীতির কারণে নয়। এখন যদি আমরা দেখি “দীর্ঘমেয়াদী সমাধান” কি? তবে দেখব যে সারা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ই নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হয়। তারা নির্ভর করে ‘ব্যবস্থার’ দক্ষতার উপর ব্যক্তির সততা নয়। আমাদের দেশে আশংকা হলো যে নির্বাচন কমিশনের কর্তারা সরকারের মনোনীত তাই তারা পক্ষপাতিত্ব করবে- কিন্তু তাদের ও পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষন করার জন্য দেশে শক্তিশালী গণমাধ্যম আছে, আছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও; সর্বোপরি, ডিজিটাল ক্যামেরাসহ মোবাইল ফোনের সর্বব্যাপী উপস্থিতি আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবল প্রসারে নির্বাচনে কোন লক্ষ্যণীয় অনিয়ম করে পার পাওয়া দৃশ্যতঃ খুবই কঠিন কাজ। এর উপর আছে এনজিও কর্তৃক সবল নির্বাচন পর্যবেক্ষন ব্যবস্থা। এখন মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে; বিরোধী দলের কারচুপির অভিযোগ যদি সত্য হয় তবে কোন দলই ক্ষমতায় থাকতে পারবেনা। আওয়ামীলীগের একটি প্রস্তাবে সরকারীদলের নির্বাচন প্রভাবিত করার পথ বন্ধ করার আরেকটি সুযোগ এসেছিল- সর্বদলীয় সরকারে বিরোধীদল কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নিজেদের জন্য বরাদ্দ নিতে পারতো যা সরকারী দলের প্রশাসনকে ব্যবহার কার্যতঃ অসম্ভব করে তুলতো। এমনকি যদি দু’পক্ষ সত্যিই যদি নিরপেক্ষ নির্বাচনে আগ্রহী হতো তবে আগে থেকেই গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগও পারষ্পারিক আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে করা যেতো যা নির্বাচন কমিশনকে অধিক নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যভাবে কাজ করতে সক্ষম করে তুলতো। পাশাপাশি নির্বাচন ব্যবস্থার পদ্ধতিগত সংষ্কারের মাধ্যমে একে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে কারচুপির সুযোগ ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব ছিল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অতীতে যে সরকারই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে তারা বিরোধীদের শত অভিযোগ সত্ত্বেও তাদের মেয়াদ পূর্ণ করেছে আর কোন সরকারই অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে কয়েক মাসও টিকতে পারেনি। এটা আমাদের জনগনের শক্তিরই প্রমাণ, গণতন্ত্রের হাজারো দূর্বলতা সত্ত্বেও। বিএনপি এর উপর আস্থা রেখে নির্বাচন ব্যবস্থাকে দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী করার পথে আগাতে পারতো। কিন্তু তা না করে এর অপব্যবহার করতে চাচ্ছে আওয়ামীলীগকে একতরফা, অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে ঠেলে দিয়ে তাদের ক্ষমতা থেকে হটাতে। যার ফলে তাদের (বিএনপি’র) নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। এর ফলে আমাদের নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার যে সুযোগ আওয়ামীলীগ অনিচ্ছা সত্ত্বেও দিতে বাধ্য হয়েছে তা বিএনপি নষ্ট করছে সচেতনভাবেই । কারণ আমাদের রাজনীতির পেশাদাররা  জনগণের রায় চায়না, তারা চায় নির্বাচন কারসাজির মাধ্যমে যে কোন প্রকারে ক্ষমতায় যেতে আর “স্বল্পমেয়াদী সমাধান”কে এজন্য তারা  সুবিধাজনক মনে করে।

(লেখাটি মাসখানেক আগে লেখা, সংবাদপত্রে ছাপানোর জন্য, কিন্তু মনে হয় সম্পাদকের পছন্দ হয়নি। আলসেমী করে আর কিছু করা হয়নি। মনে হলো এর প্রসঙ্গিকতা একেবারে ফুরিয়ে যায়নি তাই এখানে তুলে দিলাম)

Posted December 12, 2013 by Abu Ala in Politics

Tagged with , , , ,